রমজানের প্রস্তুতি: কিভাবে শুরু করবেন জেনে নিন।

0

আসসালামু আলাইকুম! রমজান মাস আমাদের খুব কাছে। আর এই মাসটা রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস। তাই এই মাসের গুরুত্ব অনেক। আমরা যারা মুসলিম, রমজান মাস এলে আমাদের মনে আনন্দের ঢেউ লাগে। কিন্তু এই মাসের প্রস্তুতিটা কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে। তাই, রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে একটা গোছানো আলোচনা করার চেষ্টা করব, যাতে আমরা সবাই সুন্দরভাবে এই মাসটি কাটাতে পারি।



রমজানের প্রস্তুতি: কিভাবে শুরু করবেন?

মাহে রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি

রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। এতে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতের মধ্যে কাটানো যায়।


১. শারীরিক প্রস্তুতি

শারীরিক প্রস্তুতিটা খুব জরুরি। কারণ, সুস্থ শরীর না থাকলে ইবাদত করা কঠিন।

  • নিয়মিত ব্যায়াম: রমজানের আগে থেকেই হালকা ব্যায়াম শুরু করুন। এতে শরীর দুর্বল লাগবে না। তারাবির নামাজেও সুবিধা হবে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ: কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। রোজার আগে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করিয়ে নিন।
  • ঘুমের অভ্যাস: রোজার সময় ঘুমের একটা পরিবর্তন হয়। তাই আগে থেকে ঘুমের একটা রুটিন তৈরি করুন।

২. মানসিক প্রস্তুতি

শারীরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতিও দরকার। মন ভালো না থাকলে ইবাদতে মন বসানো যায় না।

  • দুশ্চিন্তা পরিহার: দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। বেশি বেশি কুরআন পড়ুন, জিকির করুন। এতে মন শান্ত থাকবে।
  • পারিবারিক সম্পর্ক: পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখুন। ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলুন।
  • পরিকল্পনা: রমজানের সময় কিভাবে কাটাবেন, তার একটা পরিকল্পনা করুন। কোন দিন কী করবেন, তার একটা তালিকা তৈরি করুন।

৩. আর্থিক প্রস্তুতি

রমজান মাসে অনেক দান-খয়রাত করা হয়। তাই আর্থিক প্রস্তুতিও দরকার।

  • যাকাত: যাদের উপর যাকাত ফরজ, তারা রমজানের আগে যাকাত আদায় করুন।
  • দান: গরিব-দুঃখীদের জন্য কিছু অর্থ আলাদা করে রাখুন। ইফতারের সময় তাদের সাহায্য করুন।
  • সাদকা: বেশি বেশি সাদকা দিন। এতে আল্লাহ খুশি হন এবং বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন।

সাওমের প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হয়?

রমজানের প্রস্তুতি মানে শুধু খাবার-দাবার জোগাড় করা নয়। এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু জড়িত।


১. রোজার নিয়ত

রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত ছাড়া রোজা হয় না। তাই রোজার নিয়ত সম্পর্কে জানতে হবে।

  • নিয়তের সময়: সেহরি খাওয়ার পর থেকে শুরু করে সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত রোজার নিয়ত করা যায়।
  • নিয়তের ভাষা: আরবিতে নিয়ত করা জরুরি নয়। বাংলাতেও নিয়ত করা যায়। যেমন: "আমি আগামীকাল আল্লাহর জন্য রোজা রাখছি।"

২. সেহরি ও ইফতার

সেহরি ও ইফতার রোজার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

  • সেহরির গুরুত্ব: সেহরি খাওয়া সুন্নত। সেহরি খেলে রোজার কষ্ট কম হয়। শরীরে শক্তি পাওয়া যায়।
  • ইফতারের গুরুত্ব: ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়। তাই ইফতারের সময় বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।

৩. তারাবির নামাজ

তারাবির নামাজ রমজান মাসের বিশেষ ইবাদত।

  • তারাবির নিয়ম: তারাবির নামাজ এশার নামাজের পর পড়তে হয়। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য যেকোনো সূরা মেলানো যায়।
  • তারাবির ফজিলত: তারাবির নামাজ পড়লে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়।

৪. কুরআন তেলাওয়াত

রমজান মাস কুরআন নাজিলের মাস। তাই এই মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত।

  • নিয়মিত তেলাওয়াত: প্রতিদিন কিছু সময় কুরআন তেলাওয়াতের জন্য আলাদা করে রাখুন।
  • অর্থ বোঝা: শুধু তেলাওয়াত করলেই হবে না, কুরআনের অর্থও বুঝতে চেষ্টা করুন।

৫. ইতিকাফ

ইতিকাফ রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

  • ইতিকাফের নিয়ম: রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে অবস্থান করে ইবাদত করাকে ইতিকাফ বলে।
  • ইতিকাফের উদ্দেশ্য: ইতিকাফের উদ্দেশ্য হল দুনিয়ার কাজ থেকে দূরে থেকে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকা।

রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)

রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হল:


প্রশ্ন ১: রমজানের আগে কী কী প্রস্তুতি নেওয়া উচিত?

উত্তর: রমজানের আগে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। শরীরকে সুস্থ রাখতে ব্যায়াম করুন, দুশ্চিন্তা পরিহার করুন এবং গরিবদের সাহায্য করার জন্য কিছু অর্থ আলাদা করে রাখুন।


প্রশ্ন ২: সাওমের প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হয়?

উত্তর: সাওমের প্রস্তুতি হিসেবে আপনি আগে থেকে কিছু নফল রোজা রাখতে পারেন, কুরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস করতে পারেন এবং রমজানের মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে জানতে পারেন।


প্রশ্ন ৩: সাহাবীদের রমজানের প্রস্তুতি কেমন ছিল?

উত্তর: সাহাবীরা রমজানের জন্য অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিতেন। তারা বেশি বেশি নফল ইবাদত করতেন, গরিবদের সাহায্য করতেন এবং নিজেদের ভুলত্রুটিগুলোর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন।


প্রশ্ন ৪: নবীজির রমজানের প্রস্তুতি কেমন ছিল?

উত্তর: নবীজি (সা.) রমজানে বেশি বেশি ইবাদত করতেন। তিনি শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং রাতে জেগে থেকে আল্লাহর ইবাদত করতেন।


প্রশ্ন ৫: রমজানের প্রস্তুতি মাসিক আল কাউসার থেকে কিভাবে নেব?

উত্তর: মাসিক আল কাউসার একটি ইসলামিক ম্যাগাজিন। এখানে রমজান মাস সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল থাকে। আপনি এই ম্যাগাজিনটি পড়ে রমজানের প্রস্তুতি নিতে পারেন।


প্রশ্ন ৬: রমজানের প্রস্তুতি বই থেকে কিভাবে নেব?

উত্তর: বাজারে রমজান মাস সম্পর্কিত অনেক বই পাওয়া যায়। এসব বইয়ে রোজার নিয়ম, ইতিকাফের নিয়ম এবং রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি এই বইগুলো পড়ে রমজানের প্রস্তুতি নিতে পারেন।


প্রশ্ন ৭: মাহে রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি কী কী?

উত্তর: মাহে রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আপনি আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো গুছিয়ে নিতে পারেন, রমজানের জন্য একটা পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন এবং নিজের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে রমজানের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।


প্রশ্ন ৮: রমজানের প্রস্তুতি সম্পর্কে হাদিস কী বলে?

উত্তর: রমজানের প্রস্তুতি সম্পর্কে অনেক হাদিস আছে। একটি হাদিসে বলা হয়েছে, "যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে রোজা রাখে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।" (বুখারি)


প্রশ্ন ৯: রমজানের প্রস্তুতি সম্পর্কে হাদিস

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন—  তোমাদের কাছে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। আল্লাহ এই মাসে তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করেছেন।_(সুনান আন-নাসাই: 2106)_   এছাড়া, তিনি শাবান মাসে বেশি নফল রোজা রাখতেন (সহিহ বুখারি: 1969) যা রমজানের প্রস্তুতির অংশ।


প্রশ্ন ১০: রমজানের প্রস্তুতি বই?

রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে অনেক ইসলামিক বই রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় বই হলো:  

1. **"রমজানের প্রস্তুতি"** – শাইখ আবু বকর জাকারিয়া  
2. **"রমজান: প্রস্তুতি ও করণীয়"** – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর  
3. **"সিয়ামের আদব ও রমজানের প্রস্তুতি"** – মাওলানা মুফতি তাকী উসমানী  

এগুলোতে রমজানের আত্মিক, শারীরিক ও আমলগত প্রস্তুতির বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

প্রশ্ন ১১: নবীজির রমজানের প্রস্তুতি

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের আগে শাবান মাসে বেশি নফল রোজা রাখতেন (সহিহ বুখারি: 1969), দোয়া-ইস্তিগফার করতেন এবং সাহাবিদের রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে মনে করিয়ে দিতেন (সুনান আন-নাসাই: 2106)।

প্রশ্ন ১২: সাহাবীদের রমজানের প্রস্তুতি

সাহাবিরা রমজানের ছয় মাস আগে থেকেই দোয়া করতেন, যেন তারা রমজান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন। তারা শাবান মাসে বেশি নফল রোজা রাখতেন, কুরআন তিলাওয়াত ও ইবাদত বাড়িয়ে দিতেন এবং রমজানের আমলের জন্য আত্মশুদ্ধির প্রস্তুতি নিতেন।

রমজানের খাদ্য প্রস্তুতি

রমজানে খাবারের একটা বিশেষ গুরুত্ব থাকে। ইফতার ও সেহরিতে কী খাবেন, তা আগে থেকে ঠিক করে রাখা ভালো।


১. সেহরির খাবার

সেহরিতে এমন খাবার খাওয়া উচিত, যা শরীরকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শক্তি দেয়।

  • কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট: লাল চালের ভাত, আটার রুটি, ওটস ইত্যাদি কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খান। এগুলো ধীরে ধীরে হজম হয় এবং শরীরে শক্তি সরবরাহ করে।
  • প্রোটিন: ডিম, দুধ, দই, মাছ বা মাংস সেহরিতে রাখতে পারেন। প্রোটিন শরীরকে সতেজ রাখে।
  • ফাইবার: সবজি ও ফল সেহরিতে যোগ করুন। ফাইবার হজমক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

২. ইফতারের খাবার

ইফতারের খাবার হওয়া উচিত সহজপাচ্য এবং স্বাস্থ্যকর।

  • খেজুর: ইফতারের শুরুতে খেজুর খাওয়া সুন্নত। খেজুর শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায়।
  • পানি: সারাদিন পর শরীর পানিশূন্য হয়ে যায়। তাই ইফতারে পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।
  • ফল: বিভিন্ন ধরনের ফল ইফতারে রাখতে পারেন। ফল ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করে শরীরকে সতেজ করে।
  • হালকা খাবার: ইফতারের শুরুতে হালকা খাবার খান। যেমন: ছোলা, মুড়ি, পিয়াজু ইত্যাদি।
  • ভাজা খাবার পরিহার: বেশি ভাজা খাবার পরিহার করুন। এগুলো হজম হতে সময় নেয় এবং শরীরে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।

৩. কিছু টিপস

  • পর্যাপ্ত পানি পান: রমজানে শরীরকে পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করতে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
  • চা ও কফি কম: চা ও কফি শরীর থেকে পানি বের করে দেয়। তাই এগুলো কম পান করা উচিত।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: ইফতারের পর হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। এতে শরীর ভালো থাকবে।
  • পর্যাপ্ত ঘুম: রমজানে পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

রমজানের সময়সূচী

রমজানের সময়সূচী মেনে চললে ইবাদত করতে সুবিধা হয়।


১. সেহরি ও ইফতারের সময়

প্রতিদিনের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচী জেনে রাখা ভালো।

  • ক্যালেন্ডার: ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত রমজানের ক্যালেন্ডার সংগ্রহ করুন।
  • অ্যাপ: মোবাইল ফোনে রমজানের সময়সূচী জানার জন্য অনেক অ্যাপ পাওয়া যায়।

২. নামাজের সময়

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচী জেনে রাখা দরকার।

  • আজান: আজানের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নামাজ পড়ার চেষ্টা করুন।
  • মসজিদ: মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।

৩. তারাবির সময়

তারাবির নামাজের সময়সূচী জেনে রাখা ভালো।

  • ইমাম: তারাবির নামাজে ইমামের সঙ্গে কুরআন তেলাওয়াত শুনলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়।
  • নিয়ম: তারাবির নামাজ ধীরে-সুস্থে পড়া উচিত।

রমজানের সামাজিক দায়িত্ব

রমজান মাস শুধু ইবাদতের মাস নয়, এটি সামাজিক দায়িত্ব পালনেরও মাস।


১. গরিবদের সাহায্য

রমজান মাসে গরিবদের সাহায্য করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

  • খাবার বিতরণ: গরিবদের মধ্যে খাবার বিতরণ করুন।
  • আর্থিক সাহায্য: যাদের প্রয়োজন, তাদের আর্থিক সাহায্য করুন।
  • পোশাক বিতরণ: ঈদ উপলক্ষে গরিবদের মধ্যে নতুন পোশাক বিতরণ করতে পারেন।

২. প্রতিবেশীর খেয়াল রাখা

প্রতিবেশীর প্রতি খেয়াল রাখা আমাদের দায়িত্ব।

  • খবর নেওয়া: আপনার প্রতিবেশীর খবর নিন। তাদের কোনো প্রয়োজন থাকলে সাহায্য করুন।
  • ইফতার বিতরণ: প্রতিবেশীদের মধ্যে ইফতার বিতরণ করতে পারেন।
  • সম্পর্ক ভালো রাখা: প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন। ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলুন।

৩. আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ

আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা আমাদের কর্তব্য।

  • দেখা করা: রমজান মাসে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যান। তাদের সঙ্গে দেখা করুন।
  • ফোন করা: যাদের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব নয়, তাদের ফোন করে খবর নিন।
  • উপহার দেওয়া: আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে ছোটখাটো উপহার দিতে পারেন।

রমজানের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি

রমজান মাস আধ্যাত্মিক উন্নতির মাস। এই মাসে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার সুযোগ পাওয়া যায়।

১. তাওবা করা

গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাওবা করা জরুরি।

  • অনুশোচনা: নিজের গুনাহগুলোর জন্য অনুশোচনা করুন।
  • ক্ষমা চাওয়া: আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান।
  • প্রতিজ্ঞা: ভবিষ্যতে আর গুনাহ না করার প্রতিজ্ঞা করুন।

২. দোয়া করা

বেশি বেশি দোয়া করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়।

  • নিয়মিত দোয়া: প্রতিদিন আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।
  • কান্নাকাটি: আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে নিজের মনের কথা বলুন।
  • দোয়া কবুল: রমজান মাসে দোয়া কবুল হয়। তাই বেশি বেশি দোয়া করুন।

৩. জিকির করা

জিকির আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকার একটি মাধ্যম।

  • নিয়মিত জিকির: প্রতিদিন কিছু সময় জিকির করুন।
  • তাসবিহ: তাসবিহ হাতে নিয়ে আল্লাহর নাম জপতে পারেন।
  • জিকিরের ফজিলত: জিকির করলে মন শান্ত থাকে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।

৪. মোরাকাবা করা

মোরাকাবা মানে নিজের ভেতরের দিকে তাকানো।

  • নীরবে বসা: কিছুক্ষণ নীরবে বসুন এবং নিজের চিন্তাগুলোকে পর্যবেক্ষণ করুন।
  • আল্লাহর ধ্যান: আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হন।
  • মনের শান্তি: মোরাকাবা করলে মনের শান্তি পাওয়া যায় এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি হয়।

রমজানের ভুল ধারণা

রমজান মাস নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। সেগুলো সম্পর্কে জানা দরকার।


১. শুধু উপোস থাকলেই রোজা হয়ে যায়

অনেকে মনে করেন, শুধু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকলেই রোজা হয়ে যায়। কিন্তু রোজা শুধু উপোস থাকার নাম নয়। এর সঙ্গে আরও অনেক বিষয় জড়িত। যেমন: মিথ্যা কথা না বলা, গীবত না করা, খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি।


২. রোজার সময় টুথপেস্ট ব্যবহার করা যায় না

অনেকে মনে করেন, রোজার সময় টুথপেস্ট ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যায়। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। রোজার সময় টুথপেস্ট ব্যবহার করা যায়, তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন পেস্ট পেটের ভেতরে না যায়।


৩. রোজার সময় চোখে ড্রপ দেওয়া যায় না

অনেকে মনে করেন, রোজার সময় চোখে ড্রপ দিলে রোজা ভেঙে যায়। কিন্তু এটা ঠিক নয়। চোখে ড্রপ দিলে রোজা ভাঙে না।


৪. রোজার সময় মেয়েদের রান্নাঘরে যাওয়া উচিত না

এটা একটা ভুল ধারণা। রোজার সময় মেয়েরা অবশ্যই রান্নাঘরে যেতে পারবে এবং পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করতে পারবে।


৫. অসুস্থ হলে রোজা রাখা যায় না

অসুস্থ হলে রোজা রাখা কঠিন। তবে যদি সামান্য অসুস্থ হন, তাহলে রোজা রাখতে পারেন। কিন্তু বেশি অসুস্থ হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখা উচিত।

রমজান মাস আমাদের জন্য একটি বিশেষ সুযোগ। এই মাসে আমরা আমাদের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। তাই আসুন, আমরা সবাই রমজানের সঠিক প্রস্তুতি নেই এবং এই মাসটিকে সুন্দরভাবে কাজে লাগাই। রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতের মধ্যে কাটাই এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।

আরো পড়ুনঃ

আশা করি, এই আলোচনা আপনাদের রমজানের প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে। রমজান মাস আপনার জীবনে বয়ে আনুক শান্তি ও সমৃদ্ধি। রমজান মোবারক!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top